ঈদযাত্রায় ট্রেন যাত্রীদের ভোগান্তি শুরু হয় টিকিট সংগ্রহের সময় থেকে। কালোবাজারি সিন্ডিকেট চক্রের কারণে ট্রেনের টিকিট কাটা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে প্রতিবছর। পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতার আলোকে পরিস্থিতি সামাল দিতে অন্তর্বর্তী সরকার এবার বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছে। তবে সরকারের সেই উদ্যোগও সফলতার মুখ দেখেনি বলে মনে হচ্ছে।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল দুটি ভাগে দুটি পৃথক সময়ে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির শুরু হয় গত ১৪ মার্চ সকাল ৮টা থেকে। অনলাইনে টিকিট বিক্রির শুরু থেকেই হুড়মুড় করে ওয়েবসাইটে ঢোকেন টিকিটপ্রত্যাশীরা। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো—ওয়েবসাইটে বা রেলসেবা অ্যাপে টিকিট থাকার তথ্য দেখালেও সিলেকশন কিংবা পেমেন্ট অপশন কাজ করছে না। এতে অনেকেই টিকিট কাটতে ব্যর্থ হয়েছেন। আবার বেশিরভাগ রুটের টিকিট তারিখভেদে শেষ হয়ে যায় দুই থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই।
অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করতে না পেয়ে অভিযোগ দিতে ঢাকা রেল স্টেশনে আসা এক যাত্রী বলেন, আমি ২৪ মার্চ রাজশাহী যাওয়ার জন্য ১৪ মার্চ সকাল থেকে অনলাইনে টিকিট কাটতে অনেকবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ওয়েব সাইটে ঢুকতে পারিনি। পরের দিনের টিকিট সংগ্রহের চেষ্টা করলাম যাতে একদিন পর হলেও যেতে পারি। কিন্তু ওয়েব সাইটের তথ্যে দেখাচ্ছে টিকিট শেষ হয়ে গেছে। টিকিট আসলেই শেষ কিনা— সেবিষয়ে সরাসরি কথা বলতে স্টেশনে এসেছিলাম। তারা বলছেন, অনলাইন ছাড়া টিকিট পাওয়া সম্ভব না। এভাবেই করতে হবে।’
আরও পড়ুন: ঈদে চলবে ৫ জোড়া বিশেষ ট্রেন, টিকিট বিক্রি ১৪ মার্চ থেকে
এদিকে গত শুক্রবার (১৪ মার্চ) সকাল ৯টায় রেলের টিকিট বিক্রির ওয়েবসাইটের তথ্যে দেখা যায়, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম অভিমুখী কোনো ট্রেনের টিকিট অবশিষ্ট নেই। তবে, ওই সময় পর্যন্ত পঞ্চগড়, লালমনিরহাটসহ রাজশাহীগামী ট্রেনের কয়েকটি টিকিট ছিল। বেলা ১১টার দিকে প্রায় সব অঞ্চলের ট্রেনের টিকিটই শেষ হয়ে গেছে।
টিকিট বিক্রি শুরুর প্রথম ১০ মিনিটের মধ্যেই পশ্চিমাঞ্চলের বেশিরভাগ টিকিট শেষ হয়ে গেছে বলে ইউএনবিকে জানান ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন।
তিনি বলেন, ‘শুক্রবার (১৪ মার্চ) থেকে অনলাইনে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রথম দিন সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে ১৫ হাজার ৭৭৩টি টিকিটের বিপরীতে ওয়েব সাইটে ২০ লাখ হিট পড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সকাল ৮টায় পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনের ২৪ মার্চের টিকিট বিক্রি শুরু হয়। তবে এ পর্যন্ত টিকিট কেনায় কোনো প্রকার সমস্যা হয়নি। কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।’
টিকিট বিক্রির সময়সূচি অনুযায়ী, গত শনিবার সকালে দ্বিতীয় দিনের মতো পশ্চিমাঞ্চলের আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি হয়েছে। টিকিট বিক্রি শুরুর পর প্রথম আধাঘণ্টায় ৭৩ লাখ বার ওয়েবসাইটে টিকিট কাটার চেষ্টা করা হয়েছে৷ সব টিকিট বিক্রিও হয়ে গেছে।
একইভাবে রবিবার বিক্রি হয়েছে ২৬ মার্চের টিকিট। এদিন প্রথম ৩০ মিনিটে সারা দেশে প্রায় ২৬ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে। এ সময় রেলেওয়ে ই-টিকিটিং ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপে মোট ৯৮ লাখ বার হিট করেছেন টিকিটপ্রত্যাশীরা।
এর আগে ৯ মার্চ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে অগ্রিম টিকিট বিক্রির তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৫ মার্চের টিকিট ১৫ মার্চ, ২৬ মার্চের টিকিট ১৬ মার্চ, ২৭ মার্চের টিকিট ১৭ মার্চ, ২৮ মার্চের টিকিট ১৮ মার্চ, ২৯ মার্চের টিকিট ১৯ মার্চ ও ৩০ মার্চের টিকিট ২০ মার্চ বিক্রি করা হবে।
আরও পড়ুন: প্রতারণা: অ্যাপ ও সরাসরি কাউন্টার থেকে ট্রেনের টিকিট কেনার পরামর্শ